শিল্পশৈলী পত্রিকায় ছাপা
মূল পত্রিকার লিঙ্ক : নিভৃত আড্ডায় হাসান আজিজুল হক
অন্তঃস্রোতী এক অনুভবের অতলে যেন হারিয়ে যাই। তখন আলাপে মশগুল ছিলাম হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে। অবিসংবাদী এই কথাকারের এক বিকেলের সান্নিধ্য বিস্মৃত হবার নয়। তখন তিনি জীবনের ৭৫-বয়স অতিক্রমী। সাহিত্য-জীবন-দর্শন নিয়ে অত্যন্ত গভীর কিছু কথা তিনি শোনালেন। সবচে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল তাঁর পুরনো স্মৃতি ও আজকের সময় নিয়ে। বললেন—আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠজন। তাঁর সম্পর্কে তিনি স্মরণ করলেন আরো অনেক কিছুই। বললেন, তাদের উভয়ের পথ আলাদা। কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা মিল। তা অবশ্য বলেছিলেন ইলিয়াস স্বয়ং। হাসান আজিজুল হক বলেন,
“আখতারুজ্জামান ইলিয়াস খুব নির্মম এক ভঙ্গিতে কথাসাহিত্য লিখেছেন। সেটি জটিল জীবন প্রকাশের একটি ধরন। আমি তাঁর সঙ্গে কত সময় কাটিয়েছি তার হিসেব নেই। কিন্তু ইলিয়াসের সাহিত্য নির্মম হলেও আমি জানি ব্যক্তি ইলিয়াস কতখানি কোমল। তিনি একজন স্নেহময় পিতা, ভাল স্বামী, সর্বোপরি একজন সংবেদনশীল মানুষ।”
হাসান আজিজুল হক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মূল্যবান চিঠিগুলোর কথাও বললেন। স্বভাবতই প্রশ্ন করলাম—“ওগুলো এখনি কোথাও ছাপছেন না কেন?”
জবাবে তিনি যা বললেন,
“ইলিয়াস এত বড় যে তাঁর চিঠি ছাপতে সঙ্কোচ বোধ করি। তিনি যে বলেছিলেন, আমাকে হাসান ভাইও বলতেন কখনো, আপনার কাছে অনেক শিখেছি। একথা আমি লিখি কি করে? আমি তো আর ইলিয়াসের শিক্ষক হতে পারব না। সে ধৃষ্টতা কি আমার আছে?”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সেমিনারের পর তাঁর সঙ্গে বৈকালিক আড্ডা জমে কবি শামীম রেজার বাসায়। তাঁর অভিজ্ঞতা-বয়ানে প্রাপ্ত লাভটুকু সঞ্চয় করলাম। তিনি তাঁর অতীত স্মৃতিচারণ করলেন। বললেন, তাঁর জীবনযাপনের কথা। তাঁর সরল সত্য-ভাষণগুলো এখনও আমার চিন্তাজগতে ক্রিয়াশীল। শিল্প হতে হলে কী করতে হয়? ব্যাখ্যা করলেন খুবই সরল ভাষ্যে।
“মানুষের জীবনকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়।”
খুবই তো পুরনো কথা। কিন্তু দারুণ এক সত্যে তা ভাস্বর। তাঁর সময়ের কথা শোনালেন তিনি। বেড়ে ওঠার গল্পগুলো শোনালেন।
“তোমরা আমাকে কী ভাবো জানি না। কেউ বুঝতে চায় না, আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। খুবই সাধারণ জীবনযাপন করি আমি।”
তিনি তখন দেখছিলেন ভারতীয় বাংলা একটি চ্যানেল। নিজে থেকেই বললেন,
“আমি যে কত কিছুই দেখি। লোকে বিশ্বাস করতে চায় না। আমি সাধারণ মানুষের মত চলি।”
তাঁর পোষাক, তাঁর ভাবনা, সত্য কথা বলতে দৃশ্যত অতি সাধারণ; মিশতে পছন্দ করেন সাধারণ মানুষদের সঙ্গেই। পশ্চিমবঙ্গে ছোটবেলায় তাঁদের বাড়িতে কিষাণ হোত। মাড়াইয়ের শেষ দিনে তাদেরকে বিশেষ ভোজ দেয়া হতো। আর এই ভোজের উপকরণ ছিল ভাপা পিঠে। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের এলাকায় এটাকে কী বলে? আমি বললাম, ‘ভাগা’। তিনি সে-সময়ের ভাপা পিঠে বানানোর কৌশল ও গুণাগুণ বর্ণনা করলেন। “তাতে নারকেলের বালাই ছিল না। নারকেল দিয়ে তারা খাবেও না। আর গুড়ও তো নয়ই। তাদের কথা—‘গুড় দিলে আবার ভাপা হল নাকি?’ সামান্য লবণ দিয়ে মাটির কলসের ওপরে ফুটোঅলা ঢাকনা দিয়ে তার ওপর চালের গুড়া দিতে হবে। তারপর একটি কাপড় পেঁচিয়ে রাখতে হবে। সিদ্ধ হয়ে গেলে খেতে হবে। তাতেই অনেক স্বাদ। আমাদের পাশে তো সব ছিল হিন্দুবাড়ি। তারা এটা খেত না। বলত, ‘এটা আবার খাবার জিনিস হল নাকি? কীভাবে যে তোমরা ওই কড়কড়ে জিনিস গলা দিয়ে নামাও।’ যাই হোক, সবার খাদ্যাভ্যাস তো এক নয়।”
সাহিত্য নিয়ে আমি ও আমার সঙ্গী মামুন-অর-রশীদ তাঁর সঙ্গে অনেক আলাপ করলাম। তিনি এ-সময়ের সাহিত্য নিয়ে বিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করলেন না। আরো বললেন, মননশীল প্রবন্ধে আমাদের সাহিত্য অত্যন্ত দুর্বল। কেন মানুষ প্রবন্ধ লেখে না?—ভেবে তিনি বিস্মিত হন। অথচ মানুষের চিন্তাজগতের সবচেয়ে বড় বিস্তার নাকি ঘটে, তাঁর ভাষ্যে, গদ্য এ-মাধ্যমটা দিয়েই। তিনি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, মুস্তাফা নূর-ঊল ইসলাম এঁদের কথা বললেন। এ-শাখায় আরো অনেককে এগিয়ে আসার কথা বললেন।
মামুন বলল, “আপনার গদ্য অত্যন্ত সুন্দর। আপনি যে-কোনো কঠিন বিষয়কে প্রবন্ধে অত্যন্ত সহজ করে বলতে পারেন।”
কথাটা তাঁর মনে ধরল। আসলেই তো ‘কথাসাহিত্যের কথকতা’ নামক বইটির বর্ণনা, তাছাড়া আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্যের যে মূল্যায়ন করেছেন, সেসব তো অত্যন্ত সহজবোধ্যতার মধ্য দিয়ে সমুদ্র-গভীর কথা।
আমি তাঁকে একটি পুরনো প্রশ্ন করি।
“স্যার, আপনি একসময় তো বলেছিলেন, আপনার হাত দিয়ে উপন্যাস হবে কীনা? আপনি তো সংশয়ী ছিলেন। তারপর যখন লিখলেন `আগুন পাখি’ কিংবা `সাবিত্রী উপাখ্যান’ তখন আপনার মধ্যে শিল্পবোধের কোনো পরিবর্তন দেখতে পেয়েছিলেন কি?”
তিনি বললেন,
“আসলে তো একই ব্যাপার। গল্পে যা বলা যায় উপন্যাসেও তাই। একটু পরিসরটাকে বাড়াতে হয় এই যা। তবে উপন্যাসে অনেক কিছুই বলবার সুযোগ তৈরি হয়। আমার `জীবন ঘষে আগুন’ তো উপন্যাসেরই কাছাকাছি।”
একটি বিষয় বোঝা গেল, ‘সাবিত্রী উপাখ্যান‘টা তাঁর জীবনের এক গভীর ক্ষতস্থান থেকে তৈরি। যে-ক্ষত তৈরি করে দেয় সমাজ। একজন নারীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ যে-সমাজ, সেখানেই তাঁর মনোবেদনা লুক্কায়িত। ভাবছি, এ-যুগের নারীরাই বা কতটা স্বাধীন? প্রতিদিন খবরের কাগজে যেভাবে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের খবর বেরোয় তাতে ‘সাবিত্রী উপাখ্যান‘ তো পুরনো কোনো কাহিনি নয়। বরং তা এক ঘটমান সমাজ-বাস্তবতা।
দর্শন নিয়ে জীবনের ব্যাপক গভীর এক জায়গায় তিনি যেন পৌঁছে দিলেন। আর দর্শনের প্রতি গভীর আগ্রহ আমার আগে থেকেই। তাছাড়া তিনি তো দর্শনেরই শিক্ষক। তাঁর লেখাতেও দার্শনিকতার ছাপ লক্ষণীয়। আর দর্শন-ভাবনা ছাড়া জীবন-ভাবনাই বা পরিপূর্ণতা লাভ করে কোথায়? তিনি সক্রেটিসের কথা বললেন। বললেন দেকার্তের কথা। পঁচাত্তরোর্ধ্ব বয়সে জীবনকে অনেকখানি দেখেছেন তিনি। সেই উপলব্ধির জগত থেকে অনেক কথা বেরিয়ে এলো। তিনি একজন পরিপূর্ণ মানুষের স্বপ্নের কথা বললেন। মানবজীবনের গভীর সত্যপ্রকাশক্ষম, তাঁর মুখে সক্রেটিসের কথাগুলো শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে গেলাম।
“তিনি গ্রিসে সে-সময় মানুষকে পরিপূর্ণতার কথা বলতেন। জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন করেই সে-জগতে পৌঁছুতে হয়। আর উপলব্ধিকেও শানাতে হয়। কেবল নলেজ ও ইনফরমেশন নয়। তার জন্য চাই প্রায়োগিক বিদ্যা। প্রয়োগের সঙ্গেই জ্ঞান পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানুষ তখন জ্ঞানী হয়ে ওঠে। সক্রেটিস বলেছিলেন প্রায়োগিক জ্ঞানের কথা। সেটাই আসল। ভার্চু হলো সে জ্ঞানের মোক্ষ ধাপ। তাই তো তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘নলেজ ইজ ভার্চু’। এটাকে আজকের দিনেও প্র্যাকটিস করতে হবে।”
হাসান আজিজুল হক কথা বলতে বলতেই পুনরায় তাঁর অতীতে প্রবেশ করেন। তাঁর বেড়ে ওঠার কথা বলেন। তাতে স্মৃতি হাতড়ানো একজন প্রাজ্ঞ মানুষের মুখচ্ছবি জ্বলজ্বল করে ভেসে ওঠে।
“আমিতো বড় হয়েছি খুব সাধারণভাবে। আমরা মায়ের ঘোমটা মাথা থেকে কখনো সরতে দেখেনি। তখন সমাজ অনেক রক্ষণশীল ছিল। বলতে দ্বিধা নেই আমাদের পরিবারেও কিছু প্রথা ছিল। তবে অন্যদের তুলনায় একটু উদার তো বটেই। পর্দা উচ্চবিত্ত সমাজে বেশি ছিল। আমাদের মুসলমান সমাজের উচ্চবিত্তের মেয়েদেরকে ঘরের বাইরে কখনো যেতে দেখা যেত না। তারা ছিল প্রায় অবরোধবাসিনী। আমাদের পরিবারের মেয়েরা কিন্তু বাইরে যেত। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘোমটা মাথায় থাকত। নিম্নশ্রেণির মেয়েমানুষদেরকে ঘোমটা দিতে দেখিনি। নিম্নশ্রেণির মানুষ ঘোমটা দেবে কেন? তারা তো কাজ করে গায়ে খেটে মরে। এখনো একটা ইটের বোঝা বহনকারী মেয়েকে বলতে যাও দেখি ‘ঘোমটা দাও’। তুমি যেই হও, গালে একটা চড় বসিয়ে দেবে না? তারা তো পেটের ভাত জোগাড় করতেই গলদঘর্ম। এসব ভাবার সময় কোথায় তাদের? মধ্যবিত্তরা এসব মানিয়ে চলে। তাও আবার একটু আপার ক্লাসের মধ্যবিত্ত। আমার কাছে মনে হয়, যেমনই হোক, পোশাকটা শালীনতার মধ্যে থাকলেই তো হলো।”
সমাজকে ভাল রাখার ব্যাপারে আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে বলে তিনি মনে করেন। লেখক-পাঠক নিয়েও বিস্তর কথা হয় তাঁর সাথে। আমাদের দেশে ভাল পাঠকসমাজ গড়ে ওঠেনি। তিনি সেই আক্ষেপ করলেন। আবার এটাও বললেন,
“আসলে সমাজটা তো সেভাবে তৈরিই হয়নি। মানুষ জীবিকা অর্জনেই গলদঘর্ম এখানে। মধ্যবিত্তরা হয়তো কিছুটা ভাবে। উচ্চবিত্তরা এসব ভাবনার ধারে কাছেও নেই। কেবল কীভাবে টাকা বানাতে হবে সেটাই তারা জানে ও চর্চা করে। ভোগবাদ এখন সর্বত্র বিষফোড়ার মতো বিস্তার করে আছে। পৃথিবীতে সবসময়ই খারাপ মানুষের অস্তিত্ব ছিল। আজো আছে। মানুষকে ঘষে মেজে ভালোর কাছে পৌঁছাতে হয়।”
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে অনেক সারগ্রাহী কথা তিনি শোনালেন। আসলে বিজ্ঞানকে না বুঝে ব্যবহারের ফলে মানুষের শূন্যতা ও দৈন্য তৈরি হয়—এটাই তিনি মানেন। বললেন,
“প্রযুক্তি মানুষকে আজকাল বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। অথচ একসময় দেখেছি গায়ের এক লোক ডাক দিলেই পুরো গা ছুটে আসতো। আজকের দিনে সে-কথা ভাববার জো নেই। প্রযুক্তি মানুষের ভাবনা কেড়ে নিয়েছে। যার আবিষ্কার তিনিই কেবল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ভেতরের মর্মটাকে উপলব্ধি করতে পারেন। সেখানে তিনিই সম্পূর্ণ। অন্যরা তো কেবল ভোক্তা। সেই ভোক্তাদের যোগ্যতা নেই সৃষ্টিকে উপলব্ধি করবার।
বিজ্ঞান তো যা আছে তারই একটি পুনরাবিষ্কার। নিউটন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের পরে একটি বড় বিপ্লব ঘটে যায়। বিজ্ঞান জগতে তার গভীর প্রভাব পড়ে। বিজ্ঞানের ট্রাজেডিও এই—তা সবসময় মানবতার কাজে আসে না। আইনস্টাইন তো অনেক সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। অথচ জীবন ও সত্যের ব্যাপারে তিনি কি শেষপর্যন্ত মতৈক্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন? তিনি তো ক্রমাগত সন্ধান করেই গেছেন।”
ঠিক তখনি মোবাইলটা তারস্বরে বেজে উঠলে তিনি বলে উঠলেন,
“এই যে মোবাইলে কলটা এল তোমাদের থেকে আমি কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। আসলে এই সম্পর্ক তো ভার্চুয়াল, রিয়্যাল নয়। আগের দিনের মানুষ অনেক কষ্ট করে জীবনযাপন করত। কিন্তু তারা বুঝত, আকাশ দেখেই বুঝে ফেলত কখন বৃষ্টি হবে, প্রকৃতির কোন পরিবর্তনটা হবে। এটাই উপলব্ধি। তার জন্য বিদ্যালয়ের প্রয়োজন নেই। আজকে তো দিন অনেক বদলেছে তবুও পৃথিবীতে এত অশান্তি কেন? আর কারাই বা অশান্তি সৃষ্টি করছে? কেন করছে? সেটাও ভাববার দরকার আছে। এ-কাজগুলো খুবই সমাজতাত্ত্বিক। তবে একই সঙ্গে জীবন-উপলব্ধির ও সাহিত্যের জন্যও প্রয়োজনীয়।”
জীবনের মতো মৃত্যুও বড় সত্য। হাসান আজিজুল হক জীবনের এই প্রান্তে এসে প্রগাঢ় এক উপলব্ধির কাছে পৌঁছে গেছেন। কথা শুনে মনে হলো—তিনি যেন এক কল্যাণকামী সাধক। কেবল তার অবয়বটা ভিন্ন। তিনি সমাজের ভেতর থেকেই তা করছেন।
তিনি বললেন, “জীবন-মৃত্যু, আত্মীয় হারানোর বেদনা সবাইকে মুহ্যমান করে। আমার স্ত্রী মারা গেছে কয়েকমাস হল। মানুষ তো জানে এটা সত্য, অর্থাৎ মৃত্যু। এটা ঘটবেই। এখান থেকে বেরিয়ে যাবার উপায় নেই। আমরা সবাই যে যার মতো চলে যাব। এটাই চিরসত্য। আমার স্ত্রী মারা গেছে সেটা তো অনিবার্যই ছিল। কিন্তু এই বুকের ভেতরটাকে তো প্রবোধ দিতে পারি না। নিজে জানি প্রশ্নগুলোর উত্তর। সত্য জেনেও যে নিজেকে মানানো যায় না।”
মৃত্যুকে পুনরায় জয় করার মানসেই তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টানেন।
“রবীন্দ্রনাথ কি তাঁর জীবনে বারবার স্বজন হারানোর ব্যথায় মুহ্যমান হননি? কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। তাকে রূপান্তরিত করেছিলেন কবিতায়। ‘শেষ লেখা’র কবিতাগুলো তো তা-ই বলে। মানুষ তো এসব নিয়ে ভাবে না। ভাবলে তারা অন্যায় করতে পারত না। সক্রেটিস তো সে-কথা বলেই গিয়েছিলেন। তাঁর ছাত্ররাই তাঁকে কণ্ঠরোধ করতে বলেছিল। তারা বলতো, ‘আপনি আর এত সত্য কথা বলবেন না। আমরা যে তার ভার বইতে পারি না। আমাদেরকে যে অন্যায় করে বাঁচতে হয়। নইলে আমরা চলতে পারি না। আপনাকে আমরাই হয় চলে যেতে বলব, না হয় শাসকদের হাতে তুলে দেব।’
যেন মহাসত্যের উচ্চারকের মতো তিনি বললেন,
“জীবনের ট্রাজেডিও সত্য। সবকিছু মিলেই এটি তৈরি হয়। এটাই তো জীবন।”
—————————————————————————————————-
(২০.০৬.২০১৩; বৃহঃবার, বিকেল ৫.০০টার আড্ডা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)
—————————————————————————————————
খোরশেদ আলম, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
যোগাযোগ/ই-মেইল : khorshed.ju.bngl@gmail.com
লেখার আন্তর্জাল : http://khorsed-alam.blogspot.com/
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন