একজন বার্ট্রান্ড রাসেলকে প্রয়োজন

লিঙ্ক থেকে পাঠ করুন : একজন বার্ট্রান্ড রাসেলকে প্রয়োজন । খোরশেদ আলম

“ঘৃণা তৈরি করলেই প্রচারণা বেশি সফল হয়।”

—কথাটা প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের (১৮৭২–১৯৭০)। তিনি কি এটা বিশ্বাস করতেন? জবাব হচ্ছে—একদমই না। বরং তাঁর জীবন ব্যতিক্রমী সব দৃষ্টান্তে ভরা। তিনি এমন একজন দার্শনিক ও মানুষ যিনি জীবনে সুখের চেয়েও সত্য ও জ্ঞানকে বেশি ভালোবাসতেন। নানা কারণেই তিনি প্রীতিভাজন হয়েছেন সমগ্র বিশ্বের জ্ঞানী ও মানবতাবাদী মানুষের কাছে। অন্যদিকে অপ্রীতিভাজন আর ঘৃণার শিকার হয়েছেন যুদ্ধবাজ, অন্যায় ও জুলুমকারী রাষ্ট্রের অধিপতিদের নিকট। দার্শনিক ও জগৎ-অনুসন্ধানী জ্ঞানীমাত্রই চিন্তা করতে পছন্দ করেন। রাসেলও সেটাই করতেন। তিনি বলতেন—

‘চিন্তা’ করার মানসিকতাকে কখনো নিরুৎসাহিত করো না। কারণ একমাত্র ‘চিন্তা’র মাধ্যমেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব।

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই চিন্তা করে পথ চলতে চায় না। মানুষকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে বা সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভাণ করাটাই তাদের প্রধান অবলম্বন। আখের গোছানো ধরনের এই বাস্তব-বিশ্বে তাই প্রকৃত মানুষের সন্ধান খুব একটা মেলে না। কিন্তু রাসেল ছিলেন প্রকৃত মনুষ্যত্বের একজন কাণ্ডারি। তিনি বলতেন— “সত্যবাদী হও, এমনকি যদি সত্যটি অপ্রীতিকর হয় তারপরও।” সত্যের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আবেগই তাঁকে স্বতন্ত্র করেছে; ঝুঁকিপূর্ণ জীবনেও উৎসাহিত করেছে। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ও যুদ্ধবিরোধী হবার জন্য তাঁকে দুই দুই বার কারাবরণ করতে হয়েছে। কারারুদ্ধ অবস্থায় তিনি রচনা করেন An Introduction to Mathematical Philosophy নামক একটি গবেষণাগ্রন্থ।

অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁকে জেলবন্দি করা হয়। কিন্তু যুদ্ধবিরোধী হলেও তিনি হিটলারের নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। শান্তিবাদী হলেও, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ৪২ বছর বয়সের রাসেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সরকার বিরোধী হয়ে ওঠেন। বলতে গেলে—মানুষকে জোর করে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন একাকি সৈনিক। কারাবরণ তো করেছেন, সেই সঙ্গে জরিমানার অর্থ পরিশোধের জন্য নিজের লাইব্রেরির বই পর্যন্ত তিনি বিক্রি করেছেন। ট্রিনিটি কলেজের চাকরি পর্যন্ত হারিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে আমেরিকা যাবার পাসপোর্ট দিতে অস্বীকার করে। ১৯১৫ সালে লেখা 'দ্যা এথিকস অব ওয়ার' নামে একটি প্রবন্ধে তিনি যুদ্ধ ও মানুষের অহং-এর বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা প্রকাশ করেন। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার জন্য তিনি সরকারকে চরম উন্মত্ত ও পাগল হিসেবে আখ্যা দেন এবং যুদ্ধ সম্পর্কে মানব-প্রকৃতির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেন। মানুষের যুদ্ধবৃত্তির একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ 'হোয়াই মেন ফাইট' নামক গ্রন্থ। রাসেল বলেন—

'আগে আমি ভাবতাম মানুষ বুঝি টাকাকেই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়, এখন মনে হচ্ছে, টাকা নয় বরং ধ্বংস-প্রবৃত্তিই মানুষের কাছে অগ্রগণ্য।'

শুধু সাধারণ মানুষ নয় বরং তিনি মনে করতেন শতকরা দশভাগেরও বেশি বুদ্ধিজীবীর কাছে সত্যের চেয়ে জনপ্রিয়তার মূল্য বেশি। সে-সময় তাঁর পক্ষে সমর্থন জানান—টি এস এলিয়ট, ডি এইচ লরেন্স, লয়েড জর্জ, ক্লিফরড এলেন প্রমুখ মানবতাবাদী শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধবাজ ও দখলদার মনোভাবী দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। তিনি প্রবল সমালোচনা করেন সোভিয়েত টোটালিটারিয়ান রাষ্ট্রের। কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে। ১৯৬০-এর দিকে ভিয়েতনামের নেতা হো চি মিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী ভূমিকায় নামেন তিনি। তাঁরা জন এফ কেনেডি ও লিন্ডন বি জনসনের যৌথ আক্রমণকে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা চালান। বিশ্বের লাখোকোটি মানুষ তখন বিবেকী কণ্ঠস্বর রাসেলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। অন্যদিকে তিনি ছিলেন আজীবন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে সোচ্চার ব্যক্তিত্ব। রাসেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ১৯৫০ সালে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলন সংগঠিত করে। এ-কারণে ১৯৬১ সালে ৯০ বছর বয়সে তাঁকে পুনরায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

তিনি একটি রাজপরিবারে জন্মেছিলেন। রাণী ভিক্টোরিয়ার কালে তাঁর দাদা লর্ড জন রাসেল ছিলেন দু বারের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ১৮৩২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রিফর্ম বিল পাশে তিনি ছিলেন অগ্রনায়ক। কিন্তু সবকিছুর ওপরে জ্ঞানের সাধনায় রাসেল নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন আর ব্যাকুল ছিলেন সত্যিকার প্রেমের জন্য। জ্ঞানসাধনায় এই আকাশচারী হবার পেছনে মানুষের জীবনে প্রকৃত স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন তিনি। আর এতেই হয়ে গেলেন অনেকের অপ্রিয়। পারিবারিক জীবনের প্রতি উষ্মার প্রকাশও একটা কারণ। Marriage and Morals গ্রন্থে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রকৃত বন্ধনটাই তিনি কামনা করেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বিবাহকে একটা প্রথামাত্রই ধরে নিয়েছে—তিনি মানতে পারেননি। তাঁর কাছে মুক্ত ও স্বাধীন নর-নারী সম্পর্কই প্রিয়তর। পারিবারিক জীবনে প্রেমহীন সম্পর্ককে তিনি বণিতাবৃত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বিবাহ-বিরোধী ছিলেন—প্রকৃতপক্ষে তা নয়, তিনি ছিলেন বিবাহের নামে শোষণমূলক সম্পর্ক-বিরোধী। তিনি বিশ্বাস করতেন ভালোবাসাই জীবন আর “ভালোবাসাকে ভয় করার অর্থ হলো জীবনকে ভয় করা। যারা জীবনকে ভয় করে তারা জীবন্মৃত অবস্থায় বেঁচে থাকে।”

অন্যদিকে রাসেল যখন রাজনীতি ও দর্শন চর্চা করছেন তখন সারা পৃথিবীজুড়ে সমাজতন্ত্রের জয়জয়কার। কিন্তু সেটাকেও গ্রহণ করতে পারলেন না, কি এক ব্যক্তিগত অনুভব তার কারণ। সেটাও তাঁকে এক বিশাল বলয়ের কাছে অপ্রিয় মানুষ বলে প্রতিপন্ন করেছে। কিন্তু রাসেল আর্তমানবতার সেবায় সারাজীবন দুঃখকাতর হয়েছেন। মানবতা তথা মানবপ্রেমকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়েছেন। তিনি একসময় জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট ও হেগেলের মতকে নিজের মত বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু অচিরেই নিজের পথ তৈরি করতে সক্ষম হয়ে ওঠেন। নিজ দেশ ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন প্লেটো, লাইবনিজ, হেগেল প্রমুখ দার্শনিকের চিন্তায় মুখর। কিন্তু বিশুদ্ধ বুদ্ধির সমান্তরালে রাখা জীবন তাঁর মোটেও পছন্দের ছিল না। এটাকে সরাসরি অভিজ্ঞতায় অনাগ্রহী বা উদাসীন বলে তিনি ভাবতেন। আত্মজীবনী ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি’তে প্রবল আত্মবিশ্বাসী এক দার্শনিক ও মানুষ রাসেল উপস্থিত। দর্শন সম্পর্কে তাঁর অনুভব সহজ-সাধারণ কিন্তু বিস্ফোরণের মতো শক্তিশালী। মানুষের কাছে যাবার ক্ষমতা তাঁর বড়ই প্রবল। তিনি মানতেন, তাই অকপট উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন—

“অনুভূতি আমার জীবনকে পরিচালিত করেছে—প্রেমের জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষা, জ্ঞানের জন্য সীমাহীন অনুসন্ধিৎসা এবং আর্তমানবতার জন্য দুঃসহ মর্মবেদনা।”

রাসেলের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে কোনো পিছুটান ছিল না। যদিও প্রগতিশীল হয়েও তিনি গণতন্ত্রবিরোধী মত সমাজতন্ত্রকে সমর্থন করতে পারেননি, তবুও তিনি ছিলেন পুঁজিবাদের কঠোর সমালোচক এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে শক্তহাতে দাঁড়ানো একজন সত্য মানুষ।

একসময়ের কেমব্রিজ শহরের ট্রিনিটি কলেজের ছাত্র রাসেল বালক বয়সেই ইউক্লিডের জ্যামিতি করায়ত্ব করেছিলেন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি রচনা করেছিলেন ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা' গ্রন্থটি। ট্রিনিটি কলেজের একাডেমিক গণিতশাস্ত্র তাঁর জ্ঞানের ক্ষুধা মেটাতে পারেনি। গণিতের যুক্তিকে তিনি সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছিলেন। আর বিভিন্ন মহলে তিনি বাধিয়েছিলেন প্রচণ্ড বিতর্ক ও আলোড়ন। সে-সময় আবার এথিক্যাল সায়েন্স বা নৈতিক বিজ্ঞান হিসেবে পরিচিত দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়নে তিনি নিবিষ্ট হয়ে ওঠেন। একসময় ভিটগেনস্টাইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগের চিন্তার উত্তরসুরি রাসেল হয়ে ওঠেন বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। একাধারে তিনি ছিলেন যুক্তিবিদ, গণিতজ্ঞ, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, সমাজকর্মী ও অহিংসবাদী। অন্যদিকে তিনি ভ্রান্ত সমাজ ও কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রের অন্যতম সমালোচক। তিনি দেশদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন ব্রিটিশদের একাধিপত্যমূলক আচরণের জন্য। যে-কোনোরকম কর্তৃত্ববাদী আচরণকে তিনি প্রবল ঘৃণার চোখে দেখতেন। এ-কারণে বলতেন—

“অন্যের ‘কর্তৃত্ব’র উপর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ রেখো না। কারণ সবসময়ই পরস্পরবিরোধী কর্তৃত্বের দেখা মেলে।”

শুধু রাষ্ট্র নয়, পারিবারিক জীবনেও মানুষের প্রতি তিনি একই ভাষণ রেখেছেন। তাঁর কথায়—

“যখনই তুমি বিরোধিতার মুখোমুখি হবে, এমনকি বিরোধীপক্ষ যদি তোমার স্বামী বা সন্তানও হয়, যুক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার চেষ্টা করো। কর্তৃত্বপ্রয়োগের মাধ্যমে নয়।”

বস্তুত তিনি জীবনে ভালোবাসার জয় কামনা করেছেন। জবরদস্তিমূলক সম্পর্ক—না পরিবার, না সমাজ, না রাষ্ট্র—কারো জন্যই ভালো নয়—এ-মতবাদ তিনি আজীবনই প্রচার করে গেছেন। তিনি প্রথাগত নৈতিকতার বিরোধী ছিলেন। বস্তুত রাসেল ছিলেন বিশ শতকের সবচে আলোচিত মানবদরদী দার্শনিকদের একজন। তিনি ছিলেন যুদ্ধ-বিগ্রহ, অশান্তি, অন্যায়, অত্যাচার ও ধর্মান্ধতার ঘোরতর বিরোধী। তিনি একদিকে যেমন চাইতেন সর্বপ্রকার শাসন-শােষণ উৎপীড়ন নির্যাতন-মুক্ত মানুষের জীবন, তেমনি তিনি ছিলেন প্রথাগত নৈতিকতারও বিরোধী। জ্ঞানের জগতে তিনি সংশয়বাদী। কিন্তু মানবিক অর্থে মোটেও সংশয়ী ছিলেন না। তিনি মানুষের জ্ঞানের অন্ধত্বকে সবসময়ই মন্দ চোখে দেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন—

“বিশ্বের মূল সমস্যা হচ্ছে, বোকা এবং গোঁড়া লোকেরা সব সময় নিশ্চিত থাকে আর জ্ঞানী লোকেরা সব সময় সংশয়ে থাকে।”

আগেই বলেছি, দর্শনশাস্ত্রে তিনি সংশয়বাদী কিন্তু জীবনের ক্ষেত্রে অসংশয়ী প্রেমপন্থি। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন—“সংকীর্ণ ভালোবাসার গণ্ডি পার হতে পারলে দেখতে পাওয়া যায় যে প্রেমের রাজ্য মিলনের রাজ্য, প্রেমের রাজ্য সৌহার্দের রাজ্য। সেখানে বিভেদ নেই, বিভক্তি নেই, আছে শুধু মমতা ও একত্ববোধ।” ‘দি কনকোয়েস্ট অব হ্যাপিনেস’ গ্রন্থে তিনি এই সত্য ভালোবাসার কথাই উচ্চারণ করেছেন। কোনো কোনো অর্থে দার্শনিক সাহিত্যকে পৃথিবীর সেরা সাহিত্য বলা হয়ে থাকে। এই দার্শনিক সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বার্ট্রান্ড রাসেল। ‘ম্যারেজ এ্যান্ড মরালস’ (১৯২৯) গ্রন্থের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এছাড়া তিনি ছোটগল্প, বড়গল্প ও মননশীল অথচ মন্ময় ধরনের বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। কবিতা নিয়েও রয়েছে তাঁর বেশ মনোজ্ঞ আলোচনা। চিন ও ভারতের কবিতা সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন ‘ম্যারেজ এ্যান্ড মরালস’ গ্রন্থে। ভারতীয় কাব্যের রহস্যবাদিতা নিয়ে তাঁর চমৎকার ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে। নারী তাতে ঈশ্বরীপ্রতিমারূপে রূপে প্রদর্শিত, তাতে যেন ঈশ্বর হয়ে উঠেছে এক প্রার্থিত প্রেমিক। অন্যদিকে মধ্যযুগের কবিতা সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য,

“একটা বিষয়ে আমরা আশ্চর্য হই—মধ্যযুগের আগেও ভালোবাসার কবিতা লেখা হয়েছে, কিন্তু তাকে প্রেমের প্রত্যক্ষ অংশীদার করা হয়নি।”

কবিতা সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য বেশ গুরুত্ববহ—

“মহান কবিতা কখনোই হৃদয়ের পরম আরাধ্য বস্তুটি লাভ না করলে জন্ম নেয় না।”

তাই অশিল্পসুলভ কবিতার ব্যাপারে তাঁর বিরাগ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ধারণা এ-ধরনের কিছু কবিতা সাহিত্যের অন্তরায়। কবি শেলী বিষয়ে তাঁর মন্তব্য বেশ মারাত্মক। তাঁর ধারণা—শেলী তাঁর কবিতায় বিচিত্র ভালোবাসার আবেগ প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি অনন্য। কিন্তু কখনও উচাটন অস্থির আবেগ একটা অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এভাবে একজন সাহিত্যিক রাসেলের বিচিত্র অভিমতের প্রকাশ আমাদের চিন্তাজগতকে নাড়া দেয়। তিনি অনন্য সৃজনশীল প্রতিভার চিহ্ন রেখেছেন—‘ম্যারেজ এ্যান্ড মরালস’ (১৯২৯), ‘দ্যা কনকোয়েস্ট অব হ্যাপিসেন’ (১৯৩০), ‘নিউ হোপস ফর এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’, ‘অন এডুকেশন’ (১৯২৬), ‘এডুকেশন এ্যান্ড দ্যা সোশাল অর্ডার’ (১৯৩২); আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্যা অটোবায়োগ্রাফি’, ‘পোর্ট্রেটস ফ্রম মেমোরি’ (১৯৫৬), ‘হোয়াই আই অ্যাম নট এ ক্রিশ্চিয়ান’ প্রভৃতি গ্রন্থে।

বার্ট্রান্ড রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। দর্শন এবং মানবতার ক্ষেত্রে অবদানও সেখানে বিবেচ্য। তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে সবার ওপরে তুলে ধরেছিলেন। মহান এই মানুষ ১৯৭০ সালে ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। মানবতার মুক্তি ও বিশ্বশান্তির জন্য উন্মুখ একটা পৃথিবীর জন্য এরকম মানুষের জন্ম যেন যুগে যুগে প্রয়োজন।


লিঙ্ক থেকে পাঠ করুন : একজন বার্ট্রান্ড রাসেলকে প্রয়োজন । খোরশেদ আলম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন