মূল পত্রিকায় আলাপচারিতা : জয়দীপ দে এবং খোরশেদ আলম
উপন্যাস নিয়ে আলাপচারিতা
[‘উদয়ের পথে’ উপন্যাসটি জয়দীপ দে লিখিত একটি দেশের জন্মের ইতিবৃত্ত। তিনি উপমহাদেশীয় ইতিহাসের বিস্তৃত পথ ধরে এঁকেছেন জান্তব মানুষ। এই মানুষরা ইতিহাস ও রাজনীতির নির্মাতা, কখনও কেউ কেউ ধ্বংসেরও অধিকর্তা। সুলিখিত ও সুদীর্ঘ পরিসর নিয়ে গঠিত ‘উদয়ের পথে’ বহু ঘটনা ও চরিত্র-সমাবেশে এক অসামান্য আখ্যান। রাজনীতির কুশীলবরা এখানে বাহ্যত চরিত্র হয়ে থাকেনি শুধু, হয়ে উঠেছে শোণিতপ্রবাহের মানুষ। ঔপন্যাসিকের ভাষায় অনন্য রসবোধ ও তীর্যক বাক্যবাণ তথা আয়রনি—সবকিছু মিলে ইতিহাসের এক মহাবয়ান এ-রচনা। সত্য বলতে, কথাসাহিত্যিক জয়দীপ দের ‘উদয়ের পথে’ বইটি পড়ে যার পর নাই বিস্মিত হয়েছিলাম। আর এই বিস্ময়ই তাঁর লেখার প্রতি অনুরাগ তৈরি করেছে। সেখান থেকেই পরিকল্পনা ও আলাপচারিতার সূত্রপাত। আশাকরি পাঠকমহল একটি বৃহৎ রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতাকে চমৎকারভাবে অনুধাবন করতে পারবেন এই আলাপচারিতায়। যারা সাহিত্যে ইতিহাস ও রাজনীতির পরম আস্বাদ পেতে চান তাঁদের জন্য ‘উদয়ের পথে’ অবশ্য পাঠ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রত্যাশা করি—ভারত উপমহাদেশীয় রাজনীতিকে প্রজ্ঞা, বিবেচনা ও গল্প-আনন্দের মধ্য দিয়ে পাঠ করে আপনারা প্রীত হবেন।]
খোরশেদ আলম : রাজনীতির মতো কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে গল্পরসের আসর! প্রেরণাটা কোথায় পেলেন?
জয়দীপ দে : রাজনীতির বাইরে তো কিছু নেই। কিন্তু আমরা ফিকশন রাইটাররা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব এড়িয়ে যেতে চাই। অনেকটা চোরাকাঁটার মতো, মাঠে হাঁটতে গেলে চাইলেও এড়াতে পারবেন না। তাই কোনো কপটতায় না গিয়ে চোরকাঁটা গায়ে মেখে নিলাম।
খোরশেদ আলম : এভাবে উপন্যাসে রাজনীতি! বিষয়টা কিন্তু বেশ মজার… ঝুঁকি তো আছেই…
জয়দীপ দে : বোকারা ঝুঁকি নেয়। আমি বোকা শ্রেণির লেখক।
খোরশেদ আলম : হা হা হা হা!আবার একইসঙ্গে ঐতিহাসিক সত্যতা ! ইতিহাস নিয়ে ‘ডিল’ করাটা যে রাজনীতির মতোই বিপজ্জনক!
জয়দীপ দে : ইতিহাস মানে সাক্ষ্য। সাক্ষ্য সবসময় নিষ্ঠুর। মুখকাটা। বিপজ্জনক তো বটেই। তবে সেই বিপদের পথে কাউকে না কাউকে তো হাঁটতেই হয়।
খোরশেদ আলম : বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে উপন্যাসে তো ইতিহাসের উপাদান ব্যবহারের নজির বেশ পুরনো। যেমন ধরুন, বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ কি সত্যেন সেন, ইলিয়াস, শওকত আলী বা আরো অনেকের উপন্যাসে ঐতিহাসিক উপাদান রয়েছে। আর প্রত্যেক লেখকের রচনায় আলাদা দর্শন বা মতাদর্শ এসে হাজির হয়। আপনি কি মনে করেন?
জয়দীপ দে : লেখকের অব্যশই নিজস্ব দর্শন থাকবে। দর্শনহীন লেখা পড়ার চেয়ে একটা মারদাঙ্গা তামিল ফিল্ম দেখা অনেক কার্যকর। সময়ের সুন্দর ব্যবহার হয়। দর্শনের মধ্যে লেখককে খুজেঁ পাওয়া যায়।
খোরশেদ আলম : এখনো জ্বলজ্বলে বা সদ্য ইতিহাস হয়ে যাওয়া, মানে, অপেক্ষাকৃত নবীন ইতিহাসে রাজনৈতিক জটিলতা থাকে। সেসব নিয়ে কাজ করাও তো কথাসাহিত্যিকের জন্য কঠিন, তাই না?
জয়দীপ দে : নবীন ইতিহাসের সঙ্গে অনেক কায়েমী স্বার্থ লেগে থাকে।তাই কঠিন, খুব কঠিন।
খোরশেদ আলম : উপমহাদেশের হেন রাজনৈতিক চরিত্র নেই ‘উদয়ের পথে’ উপন্যাসে বোধহয় বাদ পড়েছে! যাই হোক, এইসব রাজনৈতিক চরিত্র বাস্তবে আনতে গিয়ে এক একটা ঝামেলা তো নিজের কাছে বোধ করেছেন?
জয়দীপ দে : এ ছিল রাত জেগে ক্ষীণদৃষ্টি নিয়ে নকশি কাঁথা সেলাই করার মতো। হয়ত চেয়েছি এমন দুটো চরিত্রকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে, এই দাঁড় করানোর ক্ষেত্র খুঁজে পেতে মাসকে মাস কেটে গেছে। কলকাতা থেকে গোয়ালন্দ হয়ে ঢাকায় আসার পথের অনুপঙ্খ বিবরণ পেতে তিন মাস ধরে এক নাগাড়ে পড়তে হয়েছে। ভীষণ কষ্টের এক যাত্রা ছিল।
খোরশেদ আলম : এতো পরিশ্রম আর কষ্টের পরও কেউ পছন্দ করবে কেউ করবে না। কারো মতের সঙ্গে তীব্র বিরোধ তো হতেই পারে। এমনকি কেউ ভুলও বুঝতে পারে। পাঠ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও তা হতে পারে?
জয়দীপ দে : আমি মাথা পেতে নেব। আমার কথা সত্যি, আমি চূড়ান্ত—তা আমি কখনোই দাবি করিনি। করব না। বরং এ-উপন্যাসের মাধ্যমে অধিকতর আলোচনার ক্ষেত্র আমি খুলে দিতে চাই।
খোরশেদ আলম : এই যে বলেছেন, “খাজা নাজিমুদ্দিনের হাজার গণ্ডা দোষ, দুর্বল চিত্তের মানুষ” কিংবা ‘হিন্দু মহাসভা’র সাম্প্রদায়িকতা …এতে তো যে যার পক্ষ ক্ষেপে উঠবে !
জয়দীপ দে : আমি যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই বলেছি।
খোরশেদ আলম : আবার দেখুন, সোহরাওয়ার্দী সম্পর্কে নানা মত রয়েছে। আপনার লেখায় তিনি আবার ‘পজেটিভ’ মানুষ!
জয়দীপ দে : ভালো মন্দ মিলিয়ে মানুষ। আমার এখানে শুধু পজেটিভ না, নেতিবাচক অনেক উপাদানও আছে।
খোরশেদ আলম : জানেন, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ছিল অটূট অবিচল। আপনি কিন্তু সে বিশ্বাসে একটু হলেও চিড় ধরিয়েছেন!…
জয়দীপ দে : চিড় ধরার কিছু নেই। অরুণ মিত্র বলেছেন না–
আজকের দিন যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে আছে কাল,
একশ গান্ধী যদি মিথ্যে হয় তবুও থাকে সত্য।
সেই সত্যটাই মহাত্মা গান্ধী। এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড়ো সত্য গান্ধী।
খোরশেদ আলম : জিন্নার কথাবার্তায় মুসলিম লীগাররাও সন্তুষ্ট ছিলেন না একসময়। যদিও তারাই আবার তাঁকে নেতা নির্বাচন করে। আমার আগ্রহ তারও চেয়ে বেশি ক্যান্সার-আক্রান্ত জিন্না তাঁর ব্যক্তিগত ডাক্তারকে “লাহোর প্রস্তাবের সংশোধন” সম্পর্কে এক ট্রাজেডির কথা বলেছিলেন… ব্যাপারখানা খুলে বলবেন?
জয়দীপ দে : মুসলিম লীগের একজন কৌশলী নেতার প্রয়োজন। জিন্নাহ সেই অভাব পূরণ করেছিলেন। তার মুখের উপরে কথা বলার কেউ ছিল না। যারা ছিল তাদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে দিয়েছিলেন। একই বল নিয়ে ছুটে গিয়ে গোল দিয়েছেন। তিনি রিয়েল ট্যালেন্ট প্লেয়ার। কিন্তু ইথিক্সের প্রশ্ন এলে কথা রয়ে যায়।
খোরশেদ আলম : এক জায়গায় বলেছেন, লাহোর প্রস্তাব এক পাকিস্তানের কথা বলেনি… এক পাকিস্তান ?…মানে…
জয়দীপ দে : অনেকগুলো পাকিস্তান হতে পারত। উত্তর পশ্চিম কোনে একটি মুসলিম রাষ্ট্র। দক্ষিণ পূর্বে আরেকটি। মধ্যাঞ্চলেও আরেকটি। নইলে ২৩ কোটি মুসলমানকে ধারণ করা যায় না। সেটা তো হলো না।
খোরশেদ আলম : শেরে বাংলা ফজলুল হক সম্পর্কে ‘উদয়ের পথে’ উপন্যাসে আপনার বিমিশ্র অনুভব পাই। দেশভাগ প্রসঙ্গ কিংবা ধরা যাক, “মুসলমানদের কাছে বেঈমান হলেন” ইত্যাদি তাঁর চরিত্রকে জটিল করে তুলেছে…এতো বড় হৃদয়ের একটা মানুষ…আসলে…
জয়দীপ দে : তিনি সত্যি জটিল। আমিও থৈ খুঁজে পাই না।
খোরশেদ আলম : আম্বেদকর বরাবরই আমাকে আকৃষ্ট করেছেন। দেখলাম—তাঁর হিন্দু ধর্মজ্ঞানের বিপরীতে আপনি গান্ধী-নেহরু’র জ্ঞানকে সন্দেহ করেছেন…‘হরিজন’ কিংবা ‘সমাজতন্ত্র’ এসব টার্ম না হয় বাদই দিলাম।
জয়দীপ দে : আম্বেদকর সে-সময়কার সবচেয়ে বাস্তববাদী ও প্রকৃত জ্ঞানী নেতা ছিলেন। তাঁর এতো ঝামেলা পাকানো সত্ত্বেও কংগ্রেস ভারত স্বাধীনের পর তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছিল। কংগ্রেস এই কাজগুলো করতে পেরেছে বলেই ভারত এ-অঞ্চলের সবচেয়ে স্থিতিশীল গণতন্ত্রের দেশ।
খোরশেদ আলম : “বঙ্গভঙ্গ একটা সেটেল্ড ইস্যু” আপনার উপন্যাসের ভাষায় বললাম। আবার তাকে রদ করা—অন্তর্নিহিত কারণটা বুঝলাম না…
জয়দীপ দে : “বঙ্গভঙ্গ একটা সেটেল্ড ইস্যু” আমার ভাষায় নয়, লর্ড কার্জনের ভাষায়।
খোরশেদ আলম : ও আচ্ছা, স্যার সৈয়দ আহমদকে এক জায়গায় আপনি উদার বলেছেন। সেক্যুলার প্রশ্নে তা কি মানা যায়? মুসলমানরা পরে তো আবার তার ওপর ক্ষেপেও গেল!…
জয়দীপ দে : জি।
খোরশেদ আলম : আচ্ছা, ঢাকার নবাব পরিবার, তো… ইংরেজরা যে তাদেরকে বশংবদ করেছিল !… এটা কি পরবর্তীকালের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল?
জয়দীপ দে : প্রশ্নটি আমার কাছে স্পষ্ট হলো না।
খোরশেদ আলম : দেখেশুনে বললে—সাম্প্রদায়িক সমস্যা, পারস্পরিক অবিশ্বাস—এসবই ভারতবর্ষের বিষফোঁড়া আরকি ! কি বলেন?
জয়দীপ দে : একমত।
খোরশেদ আলম : মাঝে মাঝে প্রীতির আহবান। তবুও তো কেউ খেলো না এক ঘাটে জল!…
জয়দীপ দে : বিষ যে রক্তে মিশে গেছে।
খোরশেদ আলম : ইতিহাস-রাজনীতি অনেক হলো। এবার উপন্যাসের গঠনের দিকে একটু ফিরে তাকাই… এতো এতো চরিত্র নিয়ে কাজ করতে খেই হারিয়ে ফেলেননি কখনো? আমার কাছে প্রত্যেকটা চরিত্রই যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রশংসাটা সামনা সামনি হয়ে গেল!! তা অবশ্য পাঠকরা বলবেন। আমি নিজেও তো পাঠক হা হা হা হা…
জয়দীপ দে : খেই হারাতে হারাতে পথ খুঁজে নিয়েছি, কী আর করা। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
খোরশেদ আলম : উপন্যাসে প্রত্যেকটা সিকোয়েন্স যেন একটা অভাবনীয় নাটকীয় সাসপেন্স দিয়ে ভরপুর। অথচ জানা-অজানা, ততোধিক, ঘটে যাওয়া গল্পগুলোই কিন্তু আপনি বলছেন…! এতো এতো ঘটনা-অনুঘটনার সঙ্গে আপনার পরিচয় ঘটলো কী করে?
জয়দীপ দে : সবই ইতিহাসের বই আর পুরনো সংবাদপত্রের ক্লিপিংসের মাধ্যমে। আমি চেষ্টা করেছি কোনো পাঠক যে-কোনো অধ্যায় থেকে উপন্যাসটি পড়া শুরু করলে যেন আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে। তাই প্রত্যেকটি অধ্যায়কে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার চেষ্টা করেছি। আমার ছোটগল্প লেখার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছি।
খোরশেদ আলম : একবাক্যে বলেন, দেশভাগের আসল ভিলেন আপনি কাকে/কাদেরকে মনে করেন?
জয়দীপ দে : দারিদ্র্য, অশিক্ষা।
খোরশেদ আলম : অর্থ একটা ব্যাপার! ইস্পাহানি-মাড়োয়ারি যেদিকেই যাই ‘মার্কেট ইকোনমি’র কথাটাই কিন্তু আগে আমার মনে আসে…
জয়দীপ দে : ঘটনাটা তো তাই।
খোরশেদ আলম : আপনার এই বক্তব্যটা আমার খুব নজর কেড়েছে—সংক্ষেপে বললে, “নজরুল-রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে জাতীয়তাবাদ”, যেখানে হিন্দু-মুসলমানে বিরোধ-বিভাজন সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা…?
জয়দীপ দে : নির্মম।
খোরশেদ আলম : সেই আবুল হাশিমের স্বপ্নময় চোখ, অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত বাংলা তো আজও চোখে দেখলাম না ভাই…আর শরৎবসু…
জয়দীপ দে : আর দেখবেনও না। মাশরেকি সাহেবের ভবিষ্যদ্বাণীই সত্য হয়েছে। হচ্ছে। দিন দিন এ-অঞ্চলে সাম্প্রদায়িকতা বাড়বে। ধর্মের নামে ভারত ভাগ একটা ভয়ানক ভুল ছিল। তার চেয়ে ১১ টি প্রদেশকে ১১ টি স্বাধীন দেশ করে দিলে সব দিক থেকে ভালো হত। এতো ক্যাচাল থাকত না। ইংরেজরা একসময় তাই চেয়েছিল।
খোরশেদ আলম : একটু আগের প্রসঙ্গে… দেখুন… মাওলানা ভাসানীও তো পারলেন না…
জয়দীপ দে : মাওলানা ভাসানীকে আগের দু জনের কাতারে না ফেললেই ভালো হয়।
খোরশেদ আলম : আচ্ছা ভালো কথা—বরিশালের যোগেন মণ্ডলের কী হলো? কলকাতা ফিরে গেলেন যে?
জয়দীপ দে : সেটা পরের পর্বে বলব। এ-পর্বে টাইমফ্রেমে আসেনি।
খোরশেদ আলম : “রাজনীতিতে ইমোশনের কোনো মূল্য নাই মুজিব।”—সোহরাওয়ার্দীর কথাটা আমার কানে কিন্তু বেজেই চলেছে! তাঁর নিজের পরিণতির কথা ভেবেও…
জয়দীপ দে : সোহরাওয়ার্দী সাহেব শুধু দক্ষ নেতা ছিলেন না, কৌশলী ব্যবস্থাপক ছিলেন। তিনি গণিতের হিসেবে রাজনীতির গুটি সাজাতেন। এ-কারণেই ১৯৪৬ ও ১৯৫৪-এর নির্বাচনে তিনি অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিলেন।
খোরশেদ আলম : ‘উদয়ের পথে’ উপন্যাসে প্রথমে ভেবেছিলাম বাংলাকেন্দ্রিক ইতিহাস-রাজনীতির কথাই বলবেন। পরে দেখলাম গাড়ি পাঞ্জাব পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে গেলেন!…
জয়দীপ দে : পাঞ্জাবের রাজনীতি না বুঝলে ১৯৪৭—৭১-এর ক্রিয়াকল্পগুলো পাঠক বুঝতে পারবে না। আরো দুটো পর্ব করার ইচ্ছে আছে। ১৯৫২ থেকে ১৯৬৬ এবং তারপর থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত। পাঞ্জাবকে এনেছি আগামী রচনার জন্য পাঠককে প্রস্তুত করে তুলতে।
খোরশেদ আলম : আপনার উপন্যাস, দাদা, আয়রনিতে ঠাসা। হাস্যরসও তো কম করেননি। আসলে জীবনের আয়নাটা দেখছি আপনি দস্তুরমতোই ব্যবহার করেছেন। ঘটনার অন্তর্লোকে আপনার দৃষ্টি সবসময়ই সজাগ-সতর্ক। আমার মনে হয় মানবজীবনের প্রতি এই বহুকৌণিক দৃষ্টিপাত আপনার ‘উদয়ের পথে’ উপন্যাসকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে। আর অনেক কিছুই থেকে গেল অকথিত। অনেক বিষয় এখনো জিজ্ঞাস্য, যদিও সময় ও ধৈর্য এখন রাশ টেনে ধরছে। আপনার উদ্ধৃতি দিয়েই আজ সমাপ্তি টানি : “কত দ্রুত বদলে যায় মানুষ। মানুষের ওপর ভূগোলের কত প্রভাব।”
জয়দীপ দে : আপনার মতো একজন বিদগ্ধ পাঠক কষ্ট করে একজন অজ্ঞাতকুলশীল লেখকের বই পড়েছেন, আবার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন—এ-আপনার ঔদার্য ব্যতীত কিছু নয়। আমার কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানবেন।
খোরশেদ আলম, লেখক, শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
জয়দীপ দে, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন