ছোটগল্প । জ্বালাদিনের বেহেশত

মূল পত্রিকায় গল্প : জ্বালাদিনের বেহেশত । খোরশেদ আলম











[ছোটবেলায় ক্ষুধা পেলে হাতেপায়ে জ্বালা করতো বলে জালাল উদ্দিনের নাম হয় জ্বালাউদ্দিন। শেষে মুখে মুখে জ্বালাদিন। সবাই তাকে এ নামেই ডাকে। কখনো সংক্ষেপে জ্বালা, কেউ ডাকে জ্বালামিঞা। এমনকি তার স্ত্রী নূরির মাও খেপে গেলে এ-নামেই ডাকে। আমরা যেমন কথায় কথায় বলি আরে জ্বালা! নানা কারণেই বাংলায় জ্বালা শব্দের ব্যবহার হয়। বেহেশত থেকে মেওয়া ফল খেতে খেতে ফোন করেন যিনি তার নাম দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন]

—“আমি বেহেশত থেকে বলতেছি। শুনতে পাইতেছ?…”– ওপাশ থেকে ফোনে বলছেন ৯৯ বছর আগে গত হওয়া দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

—“জি, তয় নেটওয়ার্ক ভালা না।” 

তবু কলড্রপ হওয়ার আগেই কথা সেরে ফেলা জরুরি। 

—”বইলা ফেলেন।”

জালাল উদ্দিন ওরফে জ্বালাদিনের প্রায় নির্বিকার কণ্ঠ। 

—“আমরা তো এখানে যার পর নাই সুখে আছি। তোমাদের কী হাল?”–দেওয়ান সালাউদ্দিন জিজ্ঞেস করলেন।

–“আমরা তার চাইতেও সুখে আছি! বুজলেননি”–জ্বালাদিনের জ্বালাময়ী জবাব।

—“তোমরা কি মেওয়া ফল পাইতেছ ওখানে?”

—“জি না, তবে তার চাইতেও ভালো ফলফলান্তি খাইতাছি এইখানে!”

কথা সত্য কি মিথ্যা ধন্দে পড়ে গেলেন দেওয়ান সালাউদ্দিন। তারপর ভেবেচিন্তে দেখলেন মেওয়া যে বেহেশতি ফল! দুনিয়ায় পাবে কোথায়? তারপরও মনে হলো জ্বালাদিন তাকে অপমানের সুরে কথা বলছে। ফলে এবার গলার স্বরটা একটুখানি চড়ে গেল। বললেন, 

—“মেওয়ার চাইতেও ভালো ফল খাইতেছ! মিছা কওয়ার আর জায়গা পাইলা না!”

জ্বালাদিন কিন্তু টেম্পার লুজ করে না। বরং তাকে আরো একটু চেতানোর জন্য বলে,

—“লাভ কি? মেওয়া খাইয়াও আপনের যেই ট্যাম্পার!” 

কথা শুনে আরো খানিকটা মেজাজ চড়ে যায় বেহেশতবাসী দেওয়ান সালাউদ্দিনের। 

—“আছো তো গুতাটুতা খাইয়া ! আর ভাব মারেইতেছ বেহেশতর অধিক ! না?”

—“আমরা তো গুতা খাইয়াও ভালা আছি। তা আম্নেরা বেহেশতে থাইকাও রাগেন ক্যান। কুল ব্রেনে থাকনের কথা।”

বেহেশতি দেওয়ান সালাউদ্দিন একটা মাত্র বাক্য উচ্চারণ করে ফোনের লাইন কেটে দেন।

—“তোর মরণ নাই জ্বালাদিন, বেহেশত নাই, দোযখও নাই!”

জ্বালাদিন হঠাৎ লাইন কেটে যাওয়ায় ভাবে কলড্রপ। পরে বোঝে—না, লাইন কেটে দিয়েছেন দেওয়ান সাব। বেহেশতবাসীর টেম্পার দেখে সে একটু হতচকিত ও বিচলিত হয়ে যায়। তারপর নিজেকেও সামলে নেয়। ভাবে, শেষ জামানা! হয়তো জিনিসপত্রের সাপ্লাইয়ে টান পড়ছে। কিন্তু… বেহেশতে তো…এটা হওয়ার কথা না! সে সম্বিত ফিরে পায়। ভাবে, যা দিনকাল! আর বেহেশত থেকে ফোন! হয়তো কোথাও গড়বড় হয়েছে। সে কুলকিনারা খুঁজে পায় না। ভাবনা আকাশ-পাতাল তোলপাড় করে। গায়ে চিমটি কেটে দেখে স্বপ্ন কীনা। কিন্তু না, সে জেগে আছে!

জ্বালাদিন তারপরও ঘোরের মধ্যে থাকে। একটা চিৎকার করে ডাক ছাড়ে—নূরির মা! আছো নি রান্নাঘর! 

জ্বালাদিন আসলে টেস্ট করে সত্যি সে দুনিয়ায় না আখেরাতে। নূরির মাও ওপাশ থেকে হাঁক ছাড়ে,

—“আজ না হয় ডিম-ই আনেন, মাছ আর সবজির যে দাম, গোশ্ তো আর আমগো কপালে জুটবো না।”

—“অ”। 

জ্বালাদিন নিশ্চিত হয়, সে অন্তত মরেনি, স্বপ্নও দেখছে না।

বেহেশত থাইকা দেওয়ান সালাউদ্দিন তাকে মিথ্যাবাদী কইয়া গালি দিছে। ক্যান দিলো? গতদিন বাজারে গিয়ে মেজাজ গরম হয়। তারপর ২ টা মাত্র ডিম ভাঙাচোরা সাইকেলটার হ্যান্ডেলে বেঁধে নিয়ে আসে। সঙ্গে আর কিছু নাই। ভাবলো পথের ধারে হেলেঞ্চা আর পানিজমা পচা জায়গাটায় কলমি শাক হয়ে রয়েছে। যাওয়ার পথে সাইকেল দাঁড় করিয়ে ওখান থেকে কিছুটা তুলে নেবে। 

দেওয়ান সালাউদ্দিনের কথা মনে করে আবার তার খোয়ারি হয়। কিন্তু মেজাজ গরম ভাবটা কাটে না। সে বিড়বিড় করতে থাকে। “বেটা দেওয়ান সালাউদ্দিন, হারামির বাচ্চা একটা! বেহেশতেই তো আছি, মরণ হইবো ক্যা?”

আবার একটা খোয়ারি আসে তার। মনে হচ্ছে দেওয়ান সালাউদ্দিন ওপার থেকে বলছেন, “দুনিয়া তো জাহান্নাম!”

জ্বালাদিন কেন জানে না তার মেজাজটা ইদানিং অকারণেই হঠাৎ হঠাৎ বিগড়ে যায়। এরকম ছোটকালে হইতো। হালার পুত দেওয়ান সালাউদ্দিন আবার ওপারে কার কাছে কি কথা লাগায়! তখন তার চিরটাকাল জাহান্নামে জ্বলা ছাড়া উপায় থাকবে না।

নূরির মা ডিম সেদ্ধ করে অর্ধেক করে কেটে নিয়ে আসে। বাকিটা তার নিজের। আরেকটা দুই সন্তানে ভাগাভাগি।  তেলের যা দর! শাকটা খালি লবণ পানিতে সিদ্ধ করা।

ডিমটা সে শেষ হওয়ার আশঙ্কা করে পাতের কোনাতেই রেখে দেয়। একটু একটু করে চিমটি দিয়ে তোলে। শাকটা মুখে তুলতেই মেজাজটা খিচে ওঠে। নূরির মাকে গালি দিতে দিতে পটাস্ করে একটা চড় মারে। কিন্তু তার অভিব্যক্তি দেখে ভড়কে যায়। নূরি মা গরুর খড়ের মতো গিলছে। পাশে সন্তান দুটোর মুখে গরুর মুখে দেখা জাবরকাটার ভঙ্গি। হড়হড়ে শাক দুধের দাঁতে ঘষে ঘষে এপার-ওপার। 

আবার ফোন আসে বেহেশত থেকে। দেওয়ান সালাউদ্দিন আগের চড়া মেজাজ নিয়েই জ্বালাদিনকে কৈফিয়ৎ দিতে বলে,

—“মিঞা! বেহেশতকে ভ্যাঙাও! না? ভেঙ্চি তোমার মুখের ভিত্রে হান্দায়া দিমু!”

—“ঝারি মারেন ক্যালা।” ফোনের লাইন কাইট্যা দিছেন। বেহেশতেও ফোনে ট্যাহা লাগেনি?” 

দেওয়ান সালাউদ্দিন এবার আরো রেগে যায়!

—“বাঞ্চোৎ, হালায় দেখি মিডিয়ার খবরও রাখে না! জানিস না, দুষ্টু জিনেরা তেল-কয়লা লইয়া গেছে গা অন্যগ্রহের মধ্যে।”

—“তাতে আমগো কি?” জ্বালাদিন প্রশ্ন করে।

—“আমগো কি মানে? বিদ্যুতের ইস্টিশন বন্দ হইয়া রইছে।”

জ্বালাদিন সারাদিন বাইরে মজুরি দেয়। তখন কারো সাথে কথা কওয়ার সময় নাই। দুনিয়া আখেরাতে কোথায় কি হইলো এর খবর সে পাবে কই? তবে মনে পড়ছে গতকাল তারও ফোন বন্ধ ছিল। এখন নিশুতি রাত। তালের পাখার বাতাস দিতে দিতে ছেলেকে শুকতারা দেখায়। আবার ভাবনার জগৎ খসে পড়ে। দেওয়ান সালাউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে সে বিড়বিড় করতে থাকে।

—“তোমগো না বেহেশতের ইস্টিশান। খালি আলো আর আলো। বাতাস আর বাতাস। মিহি ঠান্ডা বাতাস! খাবার আর খাবার। আঙ্গুর আর মেওয়া।” 

জ্বালাদিনের ছেলে কেরোসিনের অভাবে চাঁদের আলোটায় চোখ লাগিয়ে পাঠের বর্ণগুলো ধরতে চায়। কিন্তু একটা তীব্র ক্ষীণদৃষ্টি যেন ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে। বলে,

—“আব্বা চাঁদটা মেলা দূর মনে লয়।”

—“ধূর বোকা! আজ ভরা পুন্নিমা।”

ক্লাসে শিখিয়ে দেওয়া পড়া সে অনবরত পাঠ করে চলে, “মঙ্গলগ্রহকে লালগ্রহ বলা হয়। সেই গ্রহে মানুষ নতুন করে বসতি স্থাপন করবে। মানবসভ্যতা আজ কত বিকশিত! সেখানে নাসা তাদের বিজ্ঞানীদের নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য গবেষণার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। লালগ্রহে বসে মানুষ একদিন আবারো আরেকটি সভ্যতা গড়ে তুলবে। মানুষেরই যেন জয়জয়কার। ধন্য হে মানবজন্ম। জয় হোক আমাদের মানব সভ্যতার।” 

—“আব্বা, লালগ্রহে যামু আমরা। ওইখানে আলোর অভাব হইবো না। দেহো, দেহো, আকাশে শুকতারাটাও দেহা যাইতাছে। ঠান্ডা বাতাসঅলা উড়ুজাহাজ লইয়া মানুষ হেইখানেও একদিন যাইবো, দেইখো…।”

জ্বালাদিন ছেলের কথায় সারা আকাশটা চারদিকে একবার দেখে নেয়। ছেলেটার মাথায় কত্ত বুদ্ধি! এর আগে একদিন পড়তাছিল—“শুক্রগ্রহকে শুকতারা বলা হয়। সূর্যের অত্যন্ত কাছে বলে সেই গ্রহ ভীষণ উত্তপ্ত।” আরো কত কি!

দেওয়ান সালাউদ্দিন আবার বেহেশত থেকে ফোন করে। কিন্তু জ্বালাদিনের ফোনের টাকার মেয়াদ ফুরিয়ে যায় বলে কলটা আসে না। 

তবে মনে আছে শেষবার তিনি জ্বালাদিনের উদ্দেশ্যে অভিসম্পাত করেছিলেন। ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন, “জ্বালাদিন, তুই ইবলিশ শয়তানের লগে হাত মিলাইছিস। তোর মরণ নাই, বেহেশত নাই, দোযখও নাই।” 

এতোদিন জ্বালাদিন অবিশ্বাস নিয়েও বেহেশতের ফোনটা এলে ধরতো। আর উল্টাসিধা কিছু কথাবার্তাও বলতো। কখনো রাগ করলেও তার মনে মনে ভালোই লাগতো। হাজারও হলেও বেহেশত বলে কথা। ইদানিং বিদ্যুুৎ থাকে না বলে সন্ধ্যা হলে সে বাড়ির বাইরে বাজারে বাজারে কিছুটা সময় কাটায়। সেখানে জেনারেটরের লাইনে স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখে। ভিড়ভাট্টার মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ মিডিয়ায় খবর শোনে। মানুষের শোরগোলটা এতো বেশি যে আসল খবর পাবার আগেই হাওয়া হয়ে যায়। আর বিচ্ছিন্ন কথাগুলো বাজারের আনাচে কানাচে ঘুরতে থাকে প্যাঁচালো বাতাসের মতো। 

হঠাৎ মিডিয়ার একটা খবরে জ্বালাদিনের চোখ আটকে যায়। সেখানে বলা হচ্ছে, বেহেশত থেকে নাকি ফেরেশতারা খানার ব্যবস্থা করেছে। তারা মান্না-সালওয়া নিয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। সে দু চোখে বিশ্বাস ধরে রাখতে পারে না। সারাটা সন্ধ্যাজুড়ে বাজারের হাওয়ায় পোলাওয়ের সুবাস। কিন্তু এতো সুবাস তাকে অজান্তেই ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।  

পরদিন গ্রামের দিকে বিরাট একটা শোরগোল শোনা যায়। একজন দরবেশ বাবা এসে হাজির। তার চেহারা থেকে রুহানি মোবারক ঝরে পড়ছে। মানুষ তার পায়ের কাছে পড়ে ধুলো নিয়ে গায়ে মাথায় অনবরত মেখে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কেউ কেউ দু চার মুঠো ধুলো দরবেশ বাবার পায়ে ছুঁয়ে গপাগপ মুখের মধ্যে পুরছে।

জ্বালাদিনও সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। ভিড়ের মধ্যে একটুখানি পথ করে নেয়ার কসরতে দু চারজন আঘাতপ্রাপ্তও হয়। দরবেশ বাবা হঠাৎ ভীষণ ক্রোধান্বিত হন। বলতে থাকেন, 

—“এই দুনিয়ার আবাল মানুষেরা। তোমাদের জন্যই আমি বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছি। শুনেছি, তোমাদের মধ্যে কেউ একজন দেওয়ান সালাউদ্দিনের সাথে মন্দ ব্যবহার করেছ। এত্ত বড়ো সাহস! আমরা সারাজাহান চষে বেড়াই। কেবল তোমাদের এই দুনিয়া না। এরকম হাজার দুনিয়া আমাদেরকে ঘুরে বেড়াতে হয়। খাস বেহেশতি ফান্ডিং। এর মর্তবা তোমরা কি বুঝবা!”

দরবেশ বাবা গতকাল গিয়ে দেখেন বেহেশতের দরজায় তালা মারা। তিনি আর ঢুকতে পারেননি। পরে পাঁচিলের ওপর থেকে একজন রক্ষি চেঁচিয়ে দরবেশকে দুনিয়ার মানুষের আহাম্মকির কথা বলতে থাকে। দেওয়ান সালাউদ্দিনের সঙ্গে তার দেখা না হলেও দরবেশ বুঝতে পারেন তার সাথে কোনো একটা গণ্ডগোল ঘটেছে দুনিয়াবাসীর। দরবেশও মনে মনে বিরক্ত হয়। এই দেওয়ান সালাউদ্দিনটার সাথে আর পারা গেল না। তুমি বেহেশতে আছো ভালো কথা। দুনিয়াবাসীরে তোমার ফোন দিতে হইবে ক্যান? আমি তো একলা না। দরবেশকুল এখন মহাবিশ্ব পরিভ্রমণে মহাব্যস্ত। কার কি সমস্যা সাগর পাড়ি দিয়ে আকাশে আকাশে ঘুরে ঘুরে মেটাচ্ছি। আর বেটা সালাউদ্দিন, তোমার সুখে থাকতে ভূতে কিলায়?

জ্বালাদিনও অন্যদের মতো দরবেশকে পেয়ে পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। 

—“দরবেশ বাবা, আমি কি করবার পারি? আমার তো জাবরকাটা দশা!”

দরবেশ খেঁকিয়ে ওঠেন। 

—“কাঁচা ঘাস, না শুকনা খড় খাইছিস? চিটাগুড় দিয়া ভূষি খাবি আজ থেকে বাড়ির সবাই।”

জ্বালাদিন প্রথমে কান্নার স্বরে, পরে শান্ত হওয়া সুরে বাবা বাবা ডাকতে থাকে। অন্যদের দেখাদেখি সেও তৎক্ষণাৎ মুষ্ঠিভরা ধুলো একেবারে গলার মধ্যে পুরতে থাকে।

ভক্তির চোটে দরবেশ বাবা প্রশান্তি অনুভব করেন নিজেও। এবার সবাইকে প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে নিয়ে যান। সবাই সামনে বসে পড়ে। তিনি বলতে থাকেন,

—দেখো মানুষেরা, দুনিয়া একটা পরীক্ষাক্ষেত্র মাত্র। জ্বালাদিনের চোখে চোখ পড়ে তার। আর মনে রাখবি বেটা, বেহেশতের কোনো মানবের সাথে মন্দ আচরণ বিধিসম্মত নয়। আরো অনেক নসিহৎ করে তিনি সামনে পা বাড়ান চলে যাওয়ার জন্য। যাবার আগে জপতে থাকেন, “কুল্লু নাফসিন জায়েকাতুল মউত। কুল্লু নাফসিন জায়েকাতুল মউত।।” 

জ্বালাদিনের তখনই বেহেশতবাসী দেওয়ান সালাউদ্দিনের শেষকথা মনে পড়ে। অভিসম্পাত করে তাকে বলেছিল, “তোর মরণ নাই, বেহেশেত নাই, দোযখও নাই!” 

সে চিৎকার দিয়ে ওঠে। বলে, 

—বাবা দরবেশ, তবে যে দেওয়ান সালাউদ্দিন আমারে অভিশাপ দিছিল, আমার নাকি মরণ নাই। মরণ না হইলে আমি পরপারে যামু কি কইরা? আর পরপারে না গেইলে কোনটা বেহেশত আর কোনটা দোযখ তা-ই বা বুঝমু কি কইরা।”

—“কুল্লু নাফসিন জায়েকাতুল মউত। বেটা, প্রত্যেক জীবই মরণশীল। একদিন মরণ তোর হবেই হবে জ্বালাদিন। সবই খোদার নির্দেশ।”—বলেই দরবেশ আকাশের দিকে তাকায়। বায়বীয় লাইনে দেওয়ান সালাউদ্দিনকে কী যেন বলতে শোনা যায় তাকে।

জ্বালাদিন এবার ধন্দে পড়ে যায়! নিশ্চয়ই বেহেশতে যারা থাকে, তাদেরই এসব কারসাজি। দরবেশ বাবা ওদেরই চ্যালা। সে তখন তার আড়মোড়া ভাঙে। সরসর করে বলে ওঠে, 

—“তাইলে দেওয়ান সালাউদ্দিন আমারে অভিশাপ দিবার ক্যাডা?” 

জ্বালাদিনের শিক্ষাদীক্ষা কম। সেও বোঝে দুনিয়ার লাহান বেহেশতও কেমন জানি বদলায়া গেছে গা। তাই বইলা “একমুখে দুই কথা!”

দরবেশ চলে যাবার জন্য উদ্যত হন। তার যাবার সময়ও অবশ্য ঘনিয়ে এসেছে। এখন আর রাগ করা চলে না। তিনি একটা হাত ওপরে তোলেন। সবাইকে নির্বিঘ্ন নিশ্চয়তা প্রদানের উদেশ্যে দরবেশ বাবা উচ্চারণ করেন, 

—”অবজ্ঞা করিও না। দেওয়ান সালাউদ্দিন জননেতা ছিল!” 

খোরশেদ আলম, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন