জন্ম শতবর্ষে গৌরকিশোর ঘোষ : আলাপচারিতা

 

সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষের পরিচয়


[গৌরকিশোর ঘোষ ২০ জুন, ১৯২৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন, মৃত্যুবরণ করেন ১৫ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে। রূপদর্শী ছদ্মনামে তিনি গল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন। জীবন ও সাহিত্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল এই সাহিত্যিক বাংলাদেশের যশোর জেলায় হাট গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিক পড়াশোনা করেন শ্রীহট্ট জেলার এক চা-বাগানে। স্কুলের পাঠ নদিয়া জেলার নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৪৫ সালে আইএস-সি পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েটের পরে প্রথাগত শিক্ষা আর এগোয়নি। ১৯৫৩ সালে সাংবাদিকতায় আসার আগে অন্তত বারো বছর জীবনের নানা ঘাটে জল খেয়েছেন। জীবন ও জীবিকার কঠোর সংগ্রামে ১৯৪১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত গৌরকিশোর ক্রমাগত পেশা বদল করেছেন। কি করতে হয়নি তাঁকে? প্রাইভেট টিউটর, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, জাহাজের খালাসি, রেস্তোরাঁ বয়, ট্রেড ইউনিয়ন অর্গানাইজার, স্কুলমাস্টার, ল্যান্ডকাস্টমস ক্লিয়ারিং কেরানি, প্রুফ রিডার এমনকি ভ্রাম্যমাণ নৃত্য-সম্প্রদায়ের ম্যানেজারের চাকরি। মুক্তচিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার জন্য তিনি বুদ্ধিজীবী মহলে জনপ্রিয় ছিলেন। সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষের দৃষ্টি ছিল অন্তর্ভেদী, সেই দেখাই তাঁর লেখাকে দিয়েছে বাড়তি সমীহ। তাঁর সাহিত্য বাংলার বিদগ্ধ পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। একসময় পেশাগতভাবে ‘সত্যযুগ’, ‘আনন্দবাজার’ প্রভৃতি পত্রিকায় চাকরি করতেন। এছাড়া ‘দেশ’ পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। আশির দশকে ‘আজকাল’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। উপন্যাস হিসেবে দেশ-মাটি-মানুষ ট্রিলজির দ্বিতীয় খণ্ড ‘প্রেম নেই’ গ্রামীণ মুসলিম জীবন নিয়ে সুবিশাল রচনা। ‘দেশ’ পত্রিকায় এই উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে বের হয়। এছাড়া সাগিনা মাহাতো, জল পড়ে পাতা নড়ে, আনাকে বলতে দাও, আমরা যেখানে, লোকটা, রূপদর্শীর সংবাদভাষ্য ইত্যাদি তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ। সাগিনা মাহাতো, তপন সিংহর পরিচালনায় চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দিলীপ কুমার। 

সাংবাদিকতার জন্যে তিনি ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘কো জয় উক’ স্মৃতি পুরস্কার এবং ১৯৮১ সালে ‘ম্যাগসাসে’ পুরস্কারে সম্মানিত হন। একই বছর মহারাষ্ট্র সরকারের পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে হরদয়াল হারমোনি পুরস্কার, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ পুরস্কার পান। তিনি ১৯৭০-এ ‘আনন্দ পুরস্কার’ ও ১৯৮২ তে ‘বঙ্কিম পুরস্কার’ পান। কলকাতা মেট্রো রেলের নতুন প্রস্তাবিত চিংড়িহাটা স্টেশনটির নাম গৌরকিশোর ঘোষের স্মৃতিতে রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন নিরাপোষ ব্যক্তিত্বের জনদরদী সৎ সাহিত্যিক।]


আলাপ শুরু

১. 

খোরশেদ আলম : গৌরকিশোর ঘোষকে নিয়ে কেন গবেষণায় আগ্রহী হলেন?

তাসনুমা জামান : গৌরকিশোর ঘোষ বাংলা সাহিত্যের একজন সচেতন শিল্পী। শিল্প যে জীবনের জন্য, এই সহজ ও সত্য বিশ্বাসের উপস্থাপনা দেখা যায় তাঁর সাহিত্যে। পটভূমি হিসেবে ছিলো সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় আলোড়ন ইত্যাদি। তাঁর লেখায় বিন্যস্ত হয়েছে মানুষের ভাবশক্তি, হৃদয়শক্তি, জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তির সংঘাত। বিচিত্র বিষয়ের প্রকাশে তাঁর সাহিত্য-প্রতিভার বিকাশ খুবই স্বতঃস্ফূর্ত। তাঁর কথাসাহিত্যে মানুষের বাস্তবতা, লালিত স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, এমনকি স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা অসাধারণ জীবনবোধে পূর্ণ। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আমাকে আকৃষ্ট করেছে তাঁর সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য। 

২.

খোরশেদ আলম : গৌরকিশোর ঘোষের জীবন দারুণ বিচিত্র—এই বৈচিত্র্যই কি তাঁকে আকর্ষণের প্রধান কারণের একটি?

তাসনুমা জামান : হ্যাঁ, আপনি যথার্থই বলেছেন। শুধু আমি না, গৌরকিশোর ঘোষের বৈচিত্র্যময় জীবন যে কোনও পাঠককেই আকর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে।

৩.

খোরশেদ আলম : সমকাল না ছুঁতে পারলে বড় কথক হওয়া যায় না। গৌরকিশোরের ক্ষেত্রে দেশভাগের পরিস্থিতি মনে হয় এই সময়কে স্পর্শ করার বড় সত্য, তাই তো?

তাসনুমা জামান : গৌরকিশোর ঘোষ সমকালকে স্পর্শ করেই তাঁর কথাসাহিত্য নির্মাণ করেছেন। একজন সৎ সাহিত্যিকের পাশাপাশি তিনি ছিলেন নির্ভীক সাংবাদিক। সমাজ ও রাজনীতির নানা দুর্ঘটনার বিষয়গুলোতে তাঁর ছিলো চুলচেরা বিশ্লেষণ। সাংবাদিকতার সূত্রে এগুলো প্রকাশ করার সুযোগ তাঁর ছিলো। এই নির্ভীক চরিত্র আমরা তাঁর সাহিত্যেও খুঁজে পাই। দেখা যাবে, গল্প-উপন্যাসের বিভিন্ন স্তরে তিনি ভারতবর্ষের ব্যক্তিমানুষ ও সমাজের প্রেক্ষাপটে সময়ের চিত্রকে সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। 

৪.

খোরশেদ আলম : গৌরকিশোরের সাংবাদিক সত্তা আর লেখক সত্তায় কোনো বিরোধ কি আপনি লক্ষ করেছেন? তাঁকে কিন্তু একজন লেখকের উর্ধ্বে সাংবাদিক বলেই লোকে পরিচিত করায়।

তাসনুমা জামান : আপনার বক্তব্য যথার্থ। গৌরকিশোর ঘোষ সাহিত্যিক অপেক্ষা সাংবাদিক হিসেবে বেশি পরিচিত। নানা ধরনের পেশা পরিবর্তনের পর সাংবাদিক হিসেবে তিনি থিতু হয়েছিলেন। এই পেশায় তিনি ছিলেন সর্বোতভাবে সত্যাশ্রয়ী। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে তিনি সবসময়ই প্রাধান্য দিতেন। এই স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার সংগ্রামে তাঁকে জেল জরিমানাও কম দিতে হয়নি। ১৯৭৫ সালে জন নিরাপত্তা আইনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আবার এই সাংবাদিকতার জন্যই ১৯৮১ সালে ‘ম্যাগসেসে’ পুরস্কার পান।  

৫.

খোরশেদ আলম : এতে তাঁর লেখকসত্তার কি কোনো ক্ষতি…

তাসনুমা জামান : আসলে দুটো ভিন্ন সত্তাকে তিনি যথেষ্ট সংযমের সঙ্গে ধারণ করতে সক্ষম ছিলেন। সাংবাদিক সত্তা দিয়ে তাঁর লেখক সত্তা অবদমিত হয়নি। আমার তো মনে হয়, তাঁর লেখকসত্তা ও সাংবাদিকসত্তা সমানতালে চলেছে, একে অপরকে সাহায্য করেছে, পেষণ করে লুপ্ত করেনি। সংবাদ-সংগ্রহের বাস্তবতাগুলো বরং তাঁকে গল্প-উপন্যাসের প্লট নির্মাণে সহায়তা করেছে। বিচিত্র ধরনের লেখাই তিনি লিখেছেন, রাজনৈতিক প্রবন্ধও লিখেছেন বিস্তর, আর মানুষের সুখ-দুঃখ কি হাসি-কান্নার সামাজিক-রাজনৈতিক কাহিনি তো আছেই। 

৬.

খোরশেদ আলম : যতটা জানি, সাম্প্রদায়িকতাকে পিষে ফেলে একটি মিলনমুখর জীবন তাঁর লক্ষ্য ছিল। হিন্দু-মুসলমানকে তিনি একসুতোয় বাঁধতে চেয়েছিলেন। এই চাওয়া কালে কতটা সফল হয়েছে সে প্রশ্ন অবশ্য অবান্তর। গবেষক হিসেবে আপনি কী বলেন…

তাসনুমা জামান : আসলে তাঁর কাছে মানুষই মৌল সত্য। সাধারণ মানুষের শ্রম-ঘাম-বিশ্বাসের প্রতি তাঁর দ্বিধাহীন প্রীতি। মানুষকে ভালোবাসার অসাধারণ এক ক্ষমতা তাঁর ছিলো। মানুষে মানুষে ভেদাভেদের দেয়ালটা ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ভারতবর্ষকে তার চিরায়ত মিলনকামী সংস্কৃতি থেকে সরিয়ে নিয়েছিলো। গৌরকিশোর ঘোষকে এটা চরমভাবে বেদনাহত করেছিলো। 

৭.

খোরশেদ আলম : এমন কোনো উপন্যাস বা চরিত্র যেখানে এই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে…

‘প্রেম নেই’ উপন্যাসে দেখবেন, সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি সাংঘাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ফটিক নামক একটি চরিত্রের অনুভবের ভেতর দিয়ে তিনি সেটা করেছেন। একটা মৃতদেহ দেখার পর ফটিকের প্রশ্নটা যেন জ্বলন্ত অঙ্গার। ফকিরকে সে বলে, “এই মুর্দা এখন কী? হিন্দু না মুসলমান?” সে জানে মাটির কবরে যাক আর চিতায় ভস্ম হোক সবই ধূলা আর বাতাসে মিশে যাবে। আচ্ছা, এই ধূলা আর বাতাসের কি হিন্দু-মুসলমান আলাদা কোনও পরিচয় আছে? ফটিক সেই প্রশ্নটাই কিন্তু রেখেছে।      

৮.

খোরশেদ আলম : সমকালীন ভারত-ইতিহাসের একটা জটিল সময় পার করেছেন গৌরকিশোর ঘোষ। তো এই জটিল সময়কে ধরার মধ্যে একটা ভিন্নতা তাঁর মধ্যে ছিল। আমার মনে হয়, অন্যদের মতো তিনি ভাবেননি। যেখানে ঝুঁকি নেয়ার নিয়েছেন।

তাসনুমা জামান : অন্যায়ের সাথে আপোষ করা তাঁর ধাতে ছিল না। কি সাংবাদিকতা কি সাহিত্যকর্ম প্রত্যেকটা জায়গায় তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন। ভারতভাগ, স্বাধীনতা, নকশাল সবই তাঁর চাক্ষুষ ঘটনা। অসম সাহসিকতায় তাঁর সমকালকে তিনি তুলে ধরেছেন। নিরপেক্ষভাবে অস্থির সময় তৈরির পেছনের কালোশক্তিকে চিহ্নিতও করেছেন। সত্য বলার ঝুঁকি তো সবসময়ই থাকে। গৌরকিশোর ঘোষ সেই ঝুঁকি নিতে দু বার ভাবেননি। আপোষহীন বক্তব্যের জন্য জেলও খেটেছেন। রাজনীতিসর্বস্ব, সুবিধাবাদী রাজনীতি করলে তাঁকে কোনো ভোগান্তিই পোহাতে হতো না। পক্ষান্তরে আর্থিকভাবেও সমৃদ্ধ হতেন।   

৯.

খোরশেদ আলম : আমরা জানি যে, তিনি বহুপ্রজ লেখক নন। কিন্তু উপন্যাসের প্রচলিত ফর্ম বা কলাকৌশল থেকে তো সরে আসতে পেরেছিলেন—

তাসনুমা জামান : তাঁর তো উপন্যাস-গল্পের সংখ্যা বেশি নয়। ‘কমার্শিয়াল’ চিন্তার সাহিত্যিক তিনি কখনই ছিলেন না। তিনি যেটুকু লিখেছেন সবটাতেই এসেছে প্রকরণের বৈচিত্র্য, নানারকম কলাকৌশল। আমার তো মনে হয় তিনি বিষয়ের চেয়ে নির্মাণশৈলীতে অধিক মনোযোগী।   

১০.

খোরশেদ আলম : ‘উপন্যাসের মতো গল্পেও তিনি শিল্প-সচেতন।’– ঠিক কোন জায়গা থেকে তাঁর ক্ষেত্রে এই বিচার যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়?

তাসনুমা জামান : দেখেন, তাঁর ছোটোগল্পও কিন্তু উপন্যাসের মতোই সংখ্যায় কম। কিন্তু সেগুলোও বিষয় ও প্রকরণের বৈচিত্র্যে ভরপুর। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত নানা শ্রেণির মানুষের জীবন প্রতীক ও ব্যঞ্জনার আড়ালে তিনি নির্মম বাস্তব করে অঙ্কন করেছেন। আবার কোথাও নগরজীবনও প্রাধান্য পেয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা, প্রেমকেন্দ্রিক মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েন প্রভৃতি বিষয়ও চিত্রিত হয়েছে। 

১১.

খোরশেদ আলম : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরকিশোর ঘোষের অবদানের কথা শুনেছিলাম। লেখায় দেশ-মাটি-মানুষ তাঁর অন্যতম উপজীব্য হয়ে উঠেছে। আসলে তো মাতৃভূমির টানকে অতিক্রম করা যায় না…

তাসনুমা জামান : জি, নিশ্চয়ই, তা যায় না। এটা আমাদের জন্য গর্বের জায়গা, তিনি এদেশের মাটিতে জন্মেছিলেন। মাতৃভূমির প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিলো অমোঘ। মানুষের প্রতি ভালোবাসা ছিলো তাঁর শর্তহীন। তিনি বিশ্বাস করতেন—ভালোবাসাই মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় ছেলেকে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “I believe in love and only love makes a man human.” মানুষের প্রতি এই ভালোবাসাই তাঁকে যুদ্ধ-আক্রান্ত বাংলাদেশে টেনে নিয়ে আসে। তিনি নিরন্তর নির্ভয়ে সংবাদসংগ্রহ করতে ছুটে বেড়ান। শরীর স্বাস্থ্য সংসার কোনওকিছুই এই অবিরাম ছুটে চলা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

১২.

খোরশেদ আলম : জীবনে বড় হতে হলে প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর সাধনা। আমার মনে হয়, লেখক গৌরকিশোর এ-কারণেই শিল্পের বরমাল্য পড়ার উপযোগী মানুষ। আমার বিশ্বাস যে, তিনি এই ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর সাধনার সত্যকেই মনেপ্রাণে মানার চেষ্টা করতেন, সে অনুযায়ী পথ চলতেন…

তাসনুমা জামান : গৌরকিশোর ঘোষ কঠোর পরিশ্রম করেছেন, বা বলা যেতে পারে, করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন উদাসীন প্রকৃতির, সংসার-বিমুখ মানুষ। ফলে সংসার চালিয়ে নেয়ার জন্য তাঁকে ও তাঁর মাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। টিকে থাকার জন্য তিনি ক্রমাগত পেশা পরিবর্তন করেছেন। ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহকারী, প্রাইভেট টিউটর, ফিটার, এ-আর-পি রেস্কিউ সার্ভিসের খালাসি, রোড সরকার, কাঠের কন্ট্রাক্টর, রেস্তোরাঁর বয়, জাহাজের ফিটার, রেশন দোকানের কেরানি, ওষুধ কোম্পানির এজেন্ট, ভ্রাম্যমাণ নৃত্য সম্প্রদায়ের ম্যানেজার, প্রুফ রিডার– হেন কাজ নেই তিনি করেননি। কাজের ফাঁকেই পড়াশোনা করেছেন। কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসি পাশ করেছেন। 

তাঁর বড় গুণ তিনি কখনও হাল ছাড়েননি। জীবনের আনন্দময় মুহূর্তগুলো উপভোগের সুযোগ তাঁর ঘটেনি। কিন্তু থেমে যাননি, লড়াকু মন নিয়ে জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। স্বীকৃতিও জুটেছে জীবনে। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ‘আনন্দ পুরস্কার’ ও ১৯৮২-তে ‘বঙ্কিম পুরস্কার’। সাংবাদিকতার জন্য অর্জন করেছেন কোরিয়ার ‘কো-জয়-উক’, ম্যানিলার ‘ম্যাগসেসে’র মতো সম্মানজনক পুরস্কার। 

সবেচেয়ে বড় কথা,  প্রতিঘাতে জর্জরিত জীবন থেকে নেয়া দুর্মর অভিজ্ঞতাই হয়তো তাঁকে সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, মানুষের পক্ষে কথা বলা বলার অমিত শক্তি দিয়েছে।  


খোরশেদ আলম : গৌরকিশোর ঘোষের জন্ম শতবর্ষে দাঁড়িয়ে আপনার এই মূল্যায়ন এদেশের মানুষের কাছে তাঁকে আরও বেশি পরিচিত করে তুলবে। আর আপনার গবেষণার কাজ শেষ হলে ভবিষ্যতের গবেষক-পাঠকরা উপকৃত হবেন। এই মহার্ঘ আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

তাসনুমা জামান : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষকে নিয়ে আপনার এই আয়োজন সার্থক হোক।

পরিচিতি

খোরশেদ আলম, অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

তাসনুমা জামান, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন